আজ সবাই স্বামীজীকে নিয়ে ব্যাস্ত, আমিও ব্যাস্ত তবে একটু অন্যভাবে আপনাদের সাথে গল্প করি। ওনার জন্ম কুন্ডলীটা দুদিন আগে নিয়ে বসেছিলাম, দেখতে দেখতে শেষ দিনের কথাটাও আমার মনে পড়লো, যেদিন উনি দেহ রেখেছিলেন,দেখা যাক ওই দিনটা কেন এমন ছিল বা কি হয়েছিল সেই দিনে। আমি জ্যোতিষ নিয়ে পড়াশোনা করছি তাই সব কিছুই জ্যোতিষ এর মতন করেই দেখতে পছন্দ করি।
আজ স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন। ১২/০১/১৮৬৩ সালে ০৬/৩৩ সকালে আজকের দিনেই উত্তর কলকাতার সিমলায় গৌরমোহন মুখার্জি স্ট্রিটের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন যুগনায়ক বিবেকানন্দ।
ধনু লগ্ন আর কন্যা রাশি।
দেহ রাখেন ০৪/০৭/১৯০২ সালে রাত 09:02 থেকে 09:১০ মিনিটে।
বৃহস্পতির দশা, শুক্রের অন্তর্দশা, বুধের প্রত্তান্তর দশা।
পরাশর মুনি বলে গেছেন ২,৭ স্থান মারক।
তাহলে মারক স্থান কিভাবে কাজ করে আমরা একবার দেখে নিই ভালো করে।
ছবিতে নিশ্চই আপনারা স্বামীজীর জন্ম আর শেষ দিনের কুন্ডলী দেখতে পারছেন।
০৪/০৭/১৯০২ সালে
১, বৃহস্পতি লগ্ন পতির দশা অবস্থান করেছিল ২য়ে, মনে মারক স্থানে।
২, শুক্রের অন্তর দশা, যাহার জন্ম কালীন অবস্থান ২য়ে।
৩, বুধের প্রত্তন্তর দশা, যাহার অবস্থান ছিল ৭মে, এই বুধ জন্ম কালীন অবস্থান ২য়ে।
এবার বুঝতে হয়তো আপনাদের একদম অসুবিধা হচ্ছে না যে পরাশর মুনি কিভাবে আমাদের মারক স্থান নিয়ে শিখিয়ে গেছেন, এটা আর নতুন কি?
পাঠক দের কাছে মনে হতেই পারে।
আর আমার ঘটা করে লেখারি বা কি প্রয়োজন আছে আজকের দিনে।
আসুন তাহলে মারক স্থান নিয়ে আরও একটু ডিটেইলস আলোচনা করি আপনাদের সাথে।
ঠিক যেদিন স্বামীজী দেহ রেখেছিলেন সেদিন কি কি করেছিলেন বা ঠিক কোন সময় উনি প্রাণ বায়ু ত্যাগ করেন।
জ্যোতিষ শাস্ত্র বলছে লগ্ন আমাদের দেহ।
তাহলে প্রতিদিনের লগ্ন অনুযায়ী আমাদের দেহের ভালো মন্দ কাজ করে। ঠিক এই ভাবেই যুক্তিবাদী জ্যোতিষ গণ হরারী বা অনেক কিছু করে থাকেন, আমি সেই প্রসঙ্গে যাচ্ছি না।
আসুন দেখে নেওয়া যাক ওইদিন স্বামীজীর ঘটনাবলী।
শুক্রবার, ২৮শে মার্চ ১৯০২, দেহত্যাগের কিছুদিন আগে নিবেদিতাকে স্বামীজি বলেছিলেন, “আমার যা দেবার ছিল তা দিয়ে ফেলেছি এখন আমাকে যেতেই হবে।”
মঙ্গলবার, ১লা জুলাই ১৯০২, মঠের মাঠে ভ্রমণ করতে করতে গঙ্গার ধারে একটা জায়গা আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে স্বামীজি গম্ভীর ভাবে বলেছিলেন, “আমার দেহ গেলে ঐখানে সৎকার করবি।”
বুধবার, ২রা জুলাই ১৯০২, তিনি বলেছিলেন, “এই বেলুড়ে যে আধ্যাত্মিক শক্তির ক্রিয়া শুরু হয়েছে, তা দেড় হাজার বছর ধরে চলবে—তা একটা বিরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ নেবে।”
শুক্রবার, ৪ঠা জুলাই ১৯০২
• খুব সকালেঃ- ঘুম থেকে উঠে, স্বামীজি মন্দিরে গেলেন উপাসনার জন্য। তাঁর মধ্যে অসুস্থতার কোন লক্ষণ নেই।
• ব্রেকফাস্টের সময়ঃ- অন্যদিনের মতই দুধ, ফল, চা, কফি যেমন খেয়ে থাকেন তেমনই খেলেন। সেদিন গঙ্গার একটি ইলিশ মাছ এবছর প্রথম কেনা হ’ল, তার দাম নিয়ে স্বামী প্রেমান্দের সঙ্গে অনেক রঙ্গ রসিকতা করলেন। আশ্রমের এক পূর্ব বঙ্গীয় বাসিন্দা ব্রজেন্দ্রকে রসিকতা করে বললেন, “তোরা বাঙ্গালরা তো নতুন ইলিশ পেলে পূজো করিস, কি দিয়ে পূজো করতে হয় এখানেও তাই কর।”
• প্রভাতী ভ্রমণঃ- বেড়াতে বেড়াতে স্বামী প্রেমানন্দকে বললেন, “আমাকে কেন নকল করবি? ঠাকুর নকল কত্তে বারণ করতেন। আমার মত উড়নচড়ে হবি নে”
• সকাল ৮-৩০ মিঃ- (সিংহ লগ্ন ৯ম, ধর্ম ভাব) প্রেমানন্দকে বললেন, “আমার আসন ঠাকুরের শয়নঘরে করে চারিদিকের দরজা বন্ধ করে দে।” ঠাকুরের ঘরে স্বামীজির ধ্যান শুরু।
• সকাল ১১-00 মিঃ- ( কন্যা লগ্ন) ধ্যানভঙ্গ, স্বামীজি গুন গুন করে গাইছেন—মা কি আমার কালো….স্বামীজি নিজ হাতে ঠাকুরের বিছানা ঝেড়ে দিলেন।
• সকাল ১১-৩০মিঃ-(কন্যা লগ্ন) নিজের ঘরে একলা না খেয়ে সকলের সঙ্গে একত্রে মধ্যাহ্ণভোজন। ইলিশ মাছের ঝোল ভাজা অম্বল ইত্যাদি দিয়ে ভাত খেলেন। বললেন, “একাদশী করে খিদেটা খুব বেড়েছে।”
• দুপুর ১২-৩০ মিঃ- ( কন্যা লগ্ন) ১৫/২০ মিনিট ঘুমিয়ে নিলেন স্বামীজি। স্বামী প্রেমানন্দকে বললেন, “চল পড়িগে। সন্নাসী হয়ে দিবা নিদ্রা পাপ।”
• অপরাহ্ণ ১টা থেকে ৪টেঃ- ( ১২ ভাব) লাইব্রেরী ঘরে সাধু সন্নাসীদের ক্লাশ নিলেন স্বামীজি। পড়ানোর বিষয় পানিনির ব্যাকরণ, ক্লাশ নেওয়ার পর স্বামীজি একটু
ক্লান্ত হয়ে পড়লেন।
• বিকেল ৪ টাঃ- (বৃশ্চিক লগ্ন ১২ভাব) এক কাপ গরম দুধ খেয়ে বেড়াতে বেরোলেন। স্বামী প্রেমানন্দকে সঙ্গী করে বেলুড় বাজার পর্য্যন্ত গেলেন। প্রায় দুমাইল ভ্রমণ ইদানিং এতটা যেতেন না।
• বিকাল ৫ টাঃ- ৫-৩০ টা: ( ধনু লগ্ন/ লগ্ন ভাব)স্বামীজি মঠে ফিরলেন। আমগাছের তলায় বেঞ্চে বসে বললেন, “আজ শরীর যেমন সুস্থ, এমন অনেকদিন বোধ করি না।” তামাক খেয়ে পায়খানা থেকে এসে বললেন, “আমার শরীর আজ খুব ভালো আছে।” স্বামী রামকৃষ্ণানন্দের পিতৃদেব শ্রী ঈশ্বর চন্দ্র চক্রবর্তীর সঙ্গে কিছু কথা বললেন।
• সন্ধ্যা ৬টাঃ-(ধনু লগ্ন) কয়কজন সন্নাসী চা খাচ্ছিলেন, স্বামীজি নিজে এক কাপ চা চাইলেন।
• সন্ধ্যা ৭টাঃ- (লগ্ন ভাব)সন্ধ্যারতির ঘন্টা বাজতেই স্বামীজি নিজের ঘরে চলে গেলেন। সঙ্গে ব্রজেন্দ্র। “আমাকে দুছড়া মালা দে, যা, বাইরে গিয়ে জপ ধ্যান কর। না ডাকলে আসবি না।” স্বামীজি জপে বসলেন দক্ষিনেশ্বরের দিকে মুখ করে।
• সন্ধ্যা ৭-৪৫ মিঃ- (মকর লগ্ন/ ২য় ভাব, মারক)স্বামীজি ব্রজেন্দ্রকে বললেন, “গরম বোধ হচ্ছে জানালা খুলে দাও।” মেঝের বিছানায় বিবেকানন্দ শুয়ে পড়লেন, হাতে জপমালা। একটু পরে বললেন, “আর বাতাস করতে হবেনা, একটু আমার পা টা টিপে দে।”
• রাত ৯-০০ টাঃ- (মকর লগ্ন/ মারক)এতক্ষন স্বামীজি চিৎ হয়েছিলেন, এবার বাঁ পাশে ফিরলেন। কয়েক সেকেন্ডের জন্য তাঁর ডান হাত একটু কাঁপল। স্বামীজির কপালে ঘামের ফোটা। এবার শিশুর মত কান্না।
• রাত ৯-০২ থেকে ৯-১০ মিঃ-(মকর লগ্ন/ মারক) গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। মিনিট দুই স্থির, আবার গভীর দীর্ঘশ্বাস। মাথা নড়ে উঠল, মাথাটা বালিশ থেকে পড়ে গেল। চক্ষু দুটি স্থির, মুখে অপূর্ব এক জ্যোতি ও হাসি।
• রাত ৯-৩০ মিঃ- সবাই ছুটে এলেন, ভাবলেন সমাধি হয়েছে। স্বামী বোধানন্দ নাড়ি ধরে কিছুক্ষণ দেখে, দাঁড়িয়ে উঠে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলেন। একজন বললেন “যাও ছুটে যাও মহেন্দ্র ডাক্তারকে ডেকে আনো।” ডাক্তার মজুমদার থাকেন নদীর ওপারে বরানগরে। প্রেমানন্দ ও নিশ্চয়ানন্দ সমাধি ভাঙাবার জন্য কানে রামকৃষ্ণ নাম শোনাতে লাগলেন।
• রাত ১০-৩০ মিঃ- ডাঃ মজুমদার, স্বামী ব্রহ্মানন্দ ও সারদানন্দ প্রায় একসঙ্গে বেলুড়ে উপস্থিত হলেন, এলেন বৈকুন্ঠ সান্যাল। ডাক্তার মজুমদার দেখলেন হৃদযন্ত্র বন্ধ। স্বামীজির দুহাত অর্ধ চন্দ্রাকারে সামনে পিছনে ঘোরাতে বললেন। কৃত্তিম উপায়ে হার্ট সচল করার সব রকম চেষ্টা চললো।
• রাত ১২-০০টাঃ- ডাক্তার জানালেন, না, স্বামীজি আর ইহলোকে নেই। হটাৎ হার্ট বন্ধ হওয়াই দেহাবসানের কারণ। স্বামীজি ইহলোক ত্যাগ করেছেন, ৩৯ বছর ৫ মাস ২৪ দিন বয়সে। তিনি কথা রেখেছেন, বলেছিলেন, আমি ৪০ দেখবো না।