পৃথিবীতে মাত্র 30 বছর বেঁচে ছিলেন তিনি কিন্তু সমস্ত পৃথিবীবাসী মনের মধ্যে চিরকাল বেঁচে থাকবেন। ভারতের আধুনিক বিজ্ঞানের অন্যতম বলে গণ্য করা হয় ওনাকে। তিনি হলেন শ্রীনিবাস রামানুজন। বাইশে ডিসেম্বর 1887 সালে সন্ধ্যে ছটা কুড়ি মিনিটে ভারতবর্ষের ইদর অঞ্চলে তার জন্ম হয়।
গণিতজ্ঞ এবং বিদ্বান হতে গেলে জ্যোতিষ শাস্ত্রে দ্বিতীয়, চতুর্থ পঞ্চম এবং নবম ভাগ সুদৃঢ় হতে হবে, এর সাথে বুধ এবং বৃহস্পতির বল শালী হতে হবে। বুধ এবং বৃহস্পতির যুক্ত জাতককে শুধু গণিতজ্ঞ নয় বিদ্বান করে তোলে।
বুধ মানুষের জীবনের ইন্টেলিজেন্স লজিক এবং ক্যালকুলেশন জায়গাটা প্রভাবিত করে, বুধ যদি পিরিত না হয় তাহলে মানুষের মনের মধ্যে অথবা মানুষের মাথার মধ্যে বুধের ভালো কাজটা দেখা যায়।
বৃহস্পতির আমাদের বিদ্যা সহজ এবং ভাল বুদ্ধি এই সমস্ত দিক টা তুলে ধরে।
এই বুধ এবং বৃহস্পতির যুক্ত মানুষ চিরকাল ইন্টেলিজেন্ট হয়ে থাকে, এর সাথে যদি কোনভাবে চন্দ্রের সংযুক্ত হয় তাহলে সেই মানুষটি অতীব প্রতিভাবান হয়ে ওঠে।
রামানুজন বাবুর জন্ম কুষ্ঠি বিচার করতে হলে মিথুন লগ্ন আদ্রা নক্ষত্র অবস্থিত। দ্বিতীয় ভাব অধিপতি চন্দ্রের অবস্থান দশম ভাবে মীন রাশিতে।
লগ্ন এবং চতুর্থ পতি বুধের অবস্থান ষষ্ঠ ভাবে বৃশ্চিক রাশিতে বৃহস্পতির সাথে সহাবস্থান করেছে। এখানে বুধ এবং বৃহস্পতির যোগসুত্র ঘটেছে। ষষ্ঠ ভাব থেকে পঞ্চম দৃষ্টি ধারা দ্বিতীয় পতি সাথে বুধ এবং বৃহস্পতি যুক্ত হয়েছে।
পঞ্চম পতি শুক্র পঞ্চম ভাবে তুলা রাশিতে অবস্থান করেছে বিশাখা নক্ষত্র, মানে বৃহস্পতি নক্ষত্র। পঞ্চম ভাব বৃহস্পতির সাথে যুক্ত হয়েছে এবং পঞ্চম ভাব শুক্র অবস্থান করে পঞ্চম ভাবকে শক্তিশালী করে তুলেছে।
নবম পতি শনি দ্বিতীয় ভাবে বকরি অবস্থান করছে পুষ্যা নক্ষত্র। বৃহস্পতি নবম বৃষ্টিদ্বারা শনির সাথে যুক্ত হয়েছে, বৃহস্পতি নিজে অনুরাধা নক্ষত্রা অবস্থান করেছে যাহা শনি নক্ষত্র। পরাশর মুনি বলেন বক্রী গ্রহ যে ভাবে অবস্থান করবে তার আগের ভাবের ফলটা প্রদান করবে, মানে যেই ঘরে অবস্থান করছে সেই ঘর এবং তার আগের ঘর দুটো ভাবে বকরি গ্রহ অবস্থান করে। শনি এখানে তার আগের ভাবে যুক্ত হয়ে লগ্ন কে যুক্ত করেছে।
এখানে লগ্ন ভাব, দ্বিতীয় ভাব, চতুর্থ ভাব, পঞ্চম ভাব, নবম ভাব এবং দশম ভাব যুক্ত হয়েছে একে অপরের সাথে। তার সাথে শনি এবং বৃহস্পতি যুক্ত হয়েছে, বুধ এবং বৃহস্পতি যুক্ত হয়েছে রাশিচক্র।
1903 চন্দ্রের দশা এবং বুধের অন্তর্দশা উনি ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। সরকারিভাবে বৃত্তি পেয়ে উনি এবার আসেন গভমেন্ট কলেজে। 13 বছর বয়সে গভমেন্ট কলেজের ডিগ্রি ক্লাসের এক ছাত্র কাছ থেকে ত্রিকোণমিতি বই নিয়েছিলেন। কয়েকদিনের মধ্যে সেই বইয়ের সমস্ত কিছু সমাধান করে দেয়। তার এই অসাধারণ প্রতিভা দেখে কলেজের অধ্যাপকরা অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। তারা বুঝতে পেরেছিলেন যে অদূর ভবিষ্যতে রামানুজন এক বিখ্যাত গণিতজ্ঞ পরিণত হবে। তাদের এই উচ্চাশা শেষ পর্যন্ত সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছিল।
1913 সালে কেতু দশা এবং কেতু অন্তর্দশাবিশ্ব বিখ্যাত গণিতজ্ঞ অধ্যাপক গডফ্রে তার টেবিলে একটি চিঠি দেখতে পেয়েছিলেন সেটা ছিল রামানুজনের কিছু অংক সেই অংক দেখে তিনি অবাক হয়েছিলেন। তারা ঠিক করেছিল এমন এক গণিত বিশারদ যাকে আমরা আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃতি দেব। গডফ্রে রামানুজন কে ইংল্যান্ডে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল।
কেতুর দশা এবং শুক্রের অন্তর্দশা রামানুজন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন এপ্রিল মাসের 1914 সালে। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি ট্রিনিটি কলেজে ফেলো হিসেবে নির্বাচিত হয়। এখানে এসে নাম্বার থিওরি নিয়ে গবেষণা করলেন।
18 অক্টোবর 1917 সালে কেতুর দশা এবং শনির অন্তর্দশা রয়েল সোসাইটি অফ লন্ডনের ফেলোশিপ দেয়া হয়। শনির মহাদশা রামানুজনের জন্মগ্রহণ হয় সেই শনির অবস্থান ছিল সেই তখন দ্বিতীয় ভাবে কর্কট রাশিতে আর জীবনের সব থেকে মূল্যবান সময় শনির অন্তর্দশা যখনই ঘটনা ঘটে তখন শনির অবস্থান ছিল সেই কর্কট রাশিতে দ্বিতীয় ভাবে।
একদা রামানুজন অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাকে কঠিন টিভি রোগে আক্রান্ত করে। হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে আছেন একা। গডফ্রে তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। গডফ্রে জিজ্ঞাসা করলেন কেমন আছেন ?
মলিন কৃষ্ট মুখে রামানুজন বললেন ভালোই আছি, আপনাকে ধন্যবাদ।
যেটা চুরি করে এলাম সে গাড়ি খানের নাম্বার 1729। মনে হচ্ছে এর মধ্যে কোন রহস্য নেই।
রোগাক্রান্ত রামানুজন লাফিয়ে উঠলেন। তার চোখের তারায় দুতি দেখা দিল। তিনি সঙ্গে সঙ্গে বললেন- না গডফ্রে, এটা অনেক কৌতুহল দীপক সংখ্যা। এটি হলো দুটি ঘনকের মাধ্যমে প্রকাশিত সব থেকে ছোট সংখ্যা। আসুন আমি বলে দিচ্ছি, তারপর রামানুজন সমস্ত ঘটনাটা আমি অসুস্থ অবস্থায় বুঝিয়ে দেয়।
নতাপাক গডফ্রে আমার এই বক্তব্য শুনে অবাক হয়ে গেলেন,মৃত্যু শয্যায় শুয়ে ও কেউ যে এভাবে কঠিন অংকের সমাধান করতে পারেন, এই ছিল তার স্বপ্নের বাইরে।
1919 সালের মার্চ মাসে রামানুজন কে ভারতবর্ষে ফিরতে হলো।বিভিন্ন জায়গায় তার চিকিৎসা হলো কিন্তু কিছুতেই তার উন্নতি চোখে পড়ল না। 26/04/1920 কেতুর দশা শনির অন্তর্দশা তার মৃত্যু হয়।এইসময় শনির অবস্থান ছিল বকরি অবস্থায় সিংহ রাশিতে। বক্রী গ্রহ সব সময় তারা আগের ভাবেও অবস্থান করে এবং ক্রিয়া করে এটা আমি আগেও বলেছিলাম। তার মানে কর্কট রাশিতে শনির অবস্থান লক্ষ্য করা যায়।
রামানুজন বাবুর জন্ম হয়েছিল শনির দশা এবং শনির অবস্থান ছিল জন্মের সময় বকরি অবস্থায় দ্বিতীয় ভাবে।
তার জীবনের সব থেকে মূল্যবান সময় ফেলোশিপ পায় তখন ছিল শনির অন্তর্দশা এবং শনির অবস্থান ছিল দ্বিতীয় ভাবে।
রামানুজন এর মৃত্যুর সময় শনির অন্তর্দশা তার মৃত্যু হয় এবং বকরি অবস্থায় অবস্থান করছিল সিংহ রাশিতে কিন্তু দ্বিতীয় ভাবে তার ক্রিয়া করেছিল। জন্ম মৃত্যু বিয়ে সকলের মধ্যে এ কি অদ্ভুত যোগ থাকে যা আমরা সবসময় বুঝে উঠতে পারিনা।
সম্রাট বোস
7890023700