Divya bharati

খুন হয়েছিল দিব্য ভারতী?

কি বলছে পুলিশ ইনভেস্টিকাশন অথবা জ্যোতিষী?
পুলিশের কথা আমি বলতে পারবো না, কিন্তু জ্যোতিষ এর কথা যদি বলতে হয় তাহলে দিব্যা ভারতীর কুষ্টি নিয়ে ভেবে দেখার বিষয় আছে আমাদের।

অতীব সুন্দরী নাবালিকা মেয়ে সিনেমায় চান্স পেয়ে গিয়েছিলো সুদু তাই নয়, খুব অল্প সময়েই বলিউড কাঁপিয়েছিলো মাত্র ২ বছরে আলোড়ন করেছিলেন, যা আজকের দিনে একজনের ওই পর্যায় পৌঁছাতে ১৫ বছর সময় লেগে যায়।

২৫/০২/১৯৭৪ সালের রাত ১১ টায় মুম্বাইতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তুলা লগ্ন এবং মীন রাশির জাতিকা। লগ্নপতি মকরে অবস্থান করায় এবং পাপ গ্রহের দৃষ্টি না থাকায় সবল হয়েছে। রেবতী নক্ষত্রে জন্ম হয়েছিলো দিব্যা ভারতীর। যোগকারক গ্রহ ৪/৫ পতি শনি ৯ এ অবস্থান করায় ভালো মনে হলেও নীচস্ত কেতু দ্বারা পীড়িত হওয়ায় দিব্যা ভারতীর স্কুল এর পড়াশোনার জীবন একেবারেই ভালো ছিলো না। আশ্চর্যের বিষয়, বলিউডে রাজ করলেও দিব্যা কিন্তু কখনওই অভিনেত্রী হতে চাননি। পড়াশোনা থেকে মুক্তি পেতে তিনি নাকি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে আসেন।

জীবনের ২য় দশা নীচস্ত কেতুর, এইসময় জাতিকার জীবনে উল্লেখযোগ্য কোনোরকম ঘটনা ঘটেনি, ১০মে লগ্নপতি শুক্রের দৃষ্টি থাকায় কর্ম স্থানকে খুবই প্রবল শক্তিশালী বনিয়েছিলো।

কেতু দশার শেষ হতে না হতেই দিব্যা মুম্বাই চকে আসেন।
মুম্বই আসার পর দক্ষিণের এক প্রযোজক ডি রামানাইডুর সঙ্গে দিব্যার আলাপ হয়। ওই প্রযোজকের হাত ধরেই দিব্যার অভিনয়ে আসা। শুক্রের ৭ম দৃষ্টি ১০ম ভাবের ওপর পড়ায় কর্ম ক্ষেত্র সবল হয়ে উঠলো।

তামিল ছবি ‘ববিলি রাজা’তে প্রথম অভিনয় করেন। তাঁর বিপরীতে ছিলেন ডাগ্গুবতী ভেঙ্কটেশ। ছবিতে সাইন করার সময় সাইনিং অ্যামাউন্ট সম্পর্কে কোনও ধারণা ছিল না।

শুক্র/শুক্র/কেতুর দশায় ১৮ বছর বয়সেই দিব্যা বাড়ির অমতে বিয়ে করেছিলেন পরিচালক সাজিদ নাদিয়াদওয়ালাকে। সবার অলক্ষে চুপিসাড়ে ১৯৯২-এর ১০ মে কোর্টে গিয়ে দু’জনে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তাঁর নাম হয় সানা। দশা পতি শুক্রের অবস্থান ছিলো ওই দিনে ৫মে, মেষ রাশিতে, ৭ম স্থান থেকে আমরা বিবাহিত জীবন বুঝি। নবমস্ত কেতুর অবস্থান ছিলো সেই দিনে ৯মে প্রত্যন্তর দশা পতি, ৯থেকে আমরা ভাগ্য বিচার করে থাকি। ভারতীয়দের জীবনে বিয়েটা ভাগ্য পরিবর্তন এর ভাবেই নিয়ে থাকি, একজীবন থেকে অন্য জীবন। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে। বৃহস্পতিকে খুব দরকার হয় বিয়ের জন্য, ওই দিনে বৃহস্পতির অবস্থান ছিল ১১সে। বাড়ির অমতে হলেও পৃথিবীর সকল শক্তি যে ওনার বিয়ে দিয়েছিলো এটা নিয়ে কোনো রকম মতভেদ নেই।

১৯৯১-এ পর পর দু’টি তেলুগু ছবিতে সাফল্য পাওয়ার পরই অফার আসে বলিউড থেকেও। বলিউডে তাঁর প্রথম ছবি ‘বিশ্বাত্মা’। ওই ছবিতে ‘সাত সমুন্দর’ গানে পুরো দেশকে নাচিয়ে ছেড়েছিলেন।

তর তর করে তাঁর ফিল্ম কেরিয়ার এগিয়ে চলছিল। অভিনয়ে আসার খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ‘দিওয়ানা’ ছবির জন্য ১৯৯২-তে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পেয়েছিলেন।

দূর্ঘটনা, আত্মহত্যা না হত্যা?

দূর্ঘটনা?……পুলিশের তদন্ত ও সাক্ষীদের সাক্ষ্য যেভাবে এসেছে (বা হয়তো যেভাবে সাজানো হয়েছে), সেটা নির্দেশ করে এটি একটি দূর্ঘটনা ছিলো। তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, সে রাতে দিব্যার মৃত্যুর সময় তিনজন মানুষ উপস্থিত ছিলঃ দিব্যা ভারতীর ড্রেস ডিজাইনার নীতা লুলা, নীতির স্বামী ডঃ শ্যাম লুলা এবং বাসার কাজের মেয়ে। দিব্যার স্বামী প্রযোজক সাজিদ নাদিদওয়ালা সেসময় বাসায় উপস্থিত ছিল না। পরেরদিন ভোরে দিব্যাকে আউটডোর শুটিংয়ে যেতে হবে বিধায় রাতের বেলাতেই সে তার ড্রেস ডিজাইনার নীতা লুলাকে বাসায় ডেকে পাঠায়। এই তিনজনের উপস্থিতিতে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে রাত ১১.৪৫ মিনিটের সময় (৫ই এপ্রিল, ১৯৯৩) শুক্র/রবি/কেতুর দশায়।

সাক্ষী নীতা লুলার ভাষ্য অনুযায়ী, দিব্যা ভারতী ড্রিঙ্ক করতঃ অবস্থায় খোলা জানালার উপর একেবারে কিনারায় বসে কাজের মেয়েটির সাথে কথা বলছিলো। এসময় সে হঠাৎ ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলে এবং যার পরিনতিতে পাঁচ তলা থেকে নীচে পড়ে নিহত হয়।

এবার দুর্ঘটনা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

দুর্ঘটনার সঙ্গে সুপ্রভাবে জড়িয়ে আছে আকস্মিকতা। জ্যোতিষ শাস্ত্র দুর্ঘটনার জন্য মূলত অষ্টম ভাবকে দায়ী করেছে। আবার গ্রহগত দিক থেকে দেখা গেলে মুখ্য কারক মঙ্গল,শনি, রাহু, কেতু ও চন্দ্র। দুর্ঘটনার বিচারে চন্দ্র খুব দুর্বল নির্দেশক। কারণ একমাত্র ভ্রমণে বা জলে দুর্ঘটনা চন্দ্র নির্দেশ করে। তবে চন্দ্র ৬/৮/১২ অবস্থান করলে হাসপাতাল নির্দেশ করে থাকে, মনে ঘটনার সময় হাসপাতালে যেতে হতে পারে। প্রধানত মঙ্গলই দুর্ঘটনার কারক গ্রহ।

শনি মঙ্গলের সহাবস্থান অথবা দৃষ্টি বিনিময় ঘটলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকবে বিশেষ ভাবে ওই গ্রহ দুটির মধ্যে যদি কোনও গ্রহ অষ্টম-পতি হয় অথবা অষ্টম-ভাবে অবস্থিত হয়।

দুঃস্থানে অথবা নীচ-ক্ষেত্রে মঙ্গল পাপগ্রহ দ্বারা দৃষ্ট বা যুক্ত হলে শারীরিক আঘাত প্রাপ্তির সম্ভাবনা থাকবে।

রাশিচক্রে রাহু-মঙ্গল-শনি যোগ অশুভ সূচক। রাহু ও শনি ও মঙ্গলের সহাবস্থান বা দৃষ্টি বিনিময় ঘটলে আকস্মিক আঘাতে রক্তপাতের সম্ভাবনা থাকে। এর সঙ্গে কোনও ভাবে অষ্টম-ভাব বা অষ্টম-পতির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করলে দুর্ঘটনার প্রাবল্য বৃদ্ধি পাবে।

রাশিচক্রে দুর্ঘটনার বিচারের সময় দেখতে হবে প্রাণহানির সম্ভাবনা আছে কিনা। লগ্ন-পতি, লগ্ন-ভাব বলবান ও শুভ হলে প্রাণহানির সম্ভাবনা থাকবে না কিন্তু অশুভ স্থানে অবস্থান করলে প্রাণ হানির সম্ভাবনা থাকে। দুর্ঘটনার কারক গ্রহ যদি বৃহস্পতি দ্বারা দৃষ্ট হয় তবে প্রাণহানির সম্ভাবনা থাকবে না কিন্তু দুর্ঘটনার সময় বৃহস্পতি ৬/৮/১২ তে অবস্থান করে তাহলে প্রাণহানী হতে পারে। সধারনত রাশিচক্রে যে সব গ্রহ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী, ওই গ্রহের দশান্তদশায় দুর্ঘটনার সম্ভাবনা প্রবল থাকে।

৫/০৪/১৯৯৩ সালের দিনটা ভালোকরে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে শুক্র/রবি/কেতুর দশা চলছিলো, যেই কেতুর অন্তর দশায় দিব্যা ভারতীর নাম যশ হয়েছিলো ৯মে (ভাগ্গ স্থান) অবস্থান কালীন সেই কেতুর প্রত্যন্তর দশায় মৃত্যু হলো ৮মে (মৃত্যু) অবস্থান কালীন। জন্ম কালীন শনি বক্রীর জন্য ১২সে মঙ্গলের সাথে সম্পর্ক করেছিলো আর মঙ্গলের ৮ম দৃষ্টি দ্বারা রাহুর সাথে সম্পর্ক করেছিলো, শনির ৭ম দৃষ্টি দ্বারা রাহুর সাথে সম্পর্কিত হওয়ায় রাহু/শনি/মঙ্গলের সম্পর্ক হয়েছিলো। জন্মকালীন মঙ্গল ৮মে অবস্থিত হয়ে জীবনের দুর্ঘটনা প্রবল করে তুলেছিলো। এই।মঙ্গল আবার মৃত্যু কালীন সময় ৯মে (ভাগ্গস্থান) অবস্থান করে মৃত্যুর ভাগ্গ বৃদ্ধি করলো। লগ্নপতি মৃত্যুকালীন সময় ৬এ ( অসুস্থ) অবস্থান করে নিজেকে দুর্বল করেছিলো। চন্দ্র যাকে আমরা মন মানসিকতা এইসব বিচার করে থাকি, মৃত্যুকালীন সময় ১২ এ (হাসপাতাল) অবস্থান করে সেও অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো।
এত কিছুর পরে আমরা যদি খুঁজে বেড়াই বৃহস্পতি একমাত্র বাঁচাতে আরে দিব্যা ভারতীকে, কিন্তু সেও মৃত্যু কালীন সময় কন্যা রাশিতে ১২এ অবস্থান করে দুর্বল হয়েছিলো। একটা গ্রহ ছিলোনা সেই দিনে সেই সময় যেখান থেকে দিব্যা ভারতী বেঁচে ফিরে আসবে।
কালের নিয়তি ওনাকে মৃত্যুর দিকে টেনে নিয়ে গেলো।

দিব্যা ভারতীর মৃত্যুরহস্যের কারনে নয়, বরং দিব্যাকে আজো লাখো ভক্ত বুকের ভেতরে লালন করে তার অভিনয়ের কারনেই; তার আদরমাখা বুলি, তার নিষ্পাপ চাহনী, ফুলের মতো সুন্দর একটি মেয়ে তার কর্মগুনেই সবার হৃদয়ে স্থায়ী আসন দখল করে নিয়েছে। দিব্যা অভিনীত ১৪টি হিন্দী মুভিই সকলে দেখেছে, এবং অধিকাংশই সকলের পছন্দের। তার সৌন্দর্য্য ও অভিনয় প্রতিভার অপূর্ব নিদর্শন হয়ে আছে এই মুভিগুলো। এই গর্জিয়াস, হাস্যোজ্জ্বল, সদা চঞ্চল, প্রানোচ্ছ্বল, নিষ্পাপ চেহারার দিব্যা ভারতীকে এই জীবনে কখনোই ভোলা সম্ভব নয়।

সম্রাট বসু