Sri ramkrishna


  • ●●●●● “যদি পাগল হতে হয়, সংসারের জিনিস লয়ে কেন পাগল হবে? যদি পাগল হতে হয়, তবে ঈশ্বরের জন্য পাগল হও।”●●●●●

সংসার জীবন মানেই একে অপরের সাথে এবং পাশে থাকা সারাজীবন। সুখে দুঃখে সারাটা জীবন একসাথেই কাটানো কিন্তু হঠাৎ একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে যদি শোনেন আপনার জীবন সঙ্গী বলেন সে সন্যাস গ্রহণ করবেন আর আপনার সন্যাস জীবন সম্পর্কে বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই তাহলে সাধারণ মানুষের জীবনে হটাৎ করে পাহাড় ভেঙে পড়তে পারে, তাই আপনার বা আপনাদের পরিচিতর বিবাহ দেবার আগে ভালো করে কুষ্টি বিচার করে নেওয়া উচিত জাতচক্রে সন্যাস যোগ আছে কিনা।

জাতচক্রে লগ্ন বা লগ্নপতির সাথে ৩/১০/১২ ভাবের যোগ তারসাথে শনি/কেতুর যোগ শনি/চন্দ্রের যোগ মানুষের মনে বৈরাগ্য সৃষ্টি করে।

●●” বেশি কাজে জড়ালেই ঈশ্বরকে ভুলিয়ে দেয়। আর কামিনী-কাঞ্চনের আসক্তি বাড়ে।●●

এমন ধরনের চিন্তা ভাবনার মানসিকতা সৃষ্টি হয়। একটা ভাব জগতে চলে যায় মানুষ। ঈশ্বর মুখী হয়ে ওঠেন, সংসার থেকে বৈরাগ্য এসে যায়।

ভারতবর্ষের ভূমিতে পূর্বে অনেক মহান ঋষি ছিলেন বা এখনো বর্তমান সমাজে অনেক মানুষকে দেখতে পাওয়া যায় তারা কিছুদিন সংসার করার পরে বৈরাগ্য আসায় সব কিছু ছেড়ে মঠ বা মন্দিরে গিয়ে ঈশ্বরের সেবায় ব্রতী হয়েছেন তাদের সকলের জাতচক্রে সন্ন্যাস যোগ দেখা যায়।

শ্রী রামকৃষ্ণ ঠাকুর নিয়ে আমরা একটু আলোচনা করি আজকে, যিনি ছেলেবেলা থেকেই বৈরাগ্য হয়েছিল সংসার জীবনে কিন্তু তবুও তাহাকে বিবাহ বন্ধনে যুক্ত হতে হয়েছিল।

● কুম্ভ লগ্ন।
● লগ্নপতি শনি তুলায় উচ্চস্ত।
● ৭ পতি রবি লগ্নে (১/৭)
● ৬ পতি চন্দ্র লগ্নে (১/৬)
● ৫/৮ পতি বুধ লগ্নে (১/৫/৮)
● কেতু ১০মে বৃশ্চিকে।

এখানে কোনোভাবেই ৩/১০/১২ সংযোগ হয়নি, কিন্তু মঙ্গল ৩/১০ পতি সে ১২ ভাবে অবস্থান করে একাই ৩/১০/১২ সংযোগ ঘটিয়েছে, মঙ্গল অবস্থান করছে চন্দ্রের নক্ষত্রে, যেই চন্দ্র লগ্নে অবস্থিত, তাই মঙ্গল একাই ১, ৬,৩,১০,১২ সংযোগ ঘটিয়েছে।

উনিশ শতকের আধ্যাত্মিক মহাপুরুষ শ্রী রামকৃষ্ণের জীবনের অজস্র অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় রামকৃষ্ণজীবনীগুলিতে। ভক্তেরা এইসব ঘটনাকে ঐশ্বরিক লীলা বলে মনে করেন, মনস্তাত্ত্বিকরা আবার এইসব ঘটনার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন। সত্যাসত্য পরে বিচার্য, আপাতত তাঁর বিবাহপূর্ব-জীবনের ১০টি এমন অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ রইল যেগুলি প্রায় কিংবদন্তির আকার নিয়েছে—

১. রামকৃষ্ণের জন্মের আগে থেকেই তাঁর জন্মের নানা অলৌকিক পূর্বাভাস তাঁর পিতামাতা পেয়েছিলেন বলে শোনা যায়। ১৮৩৫ সালে রামকৃষ্ণের পিতা ক্ষুদিরাম তীর্থ ভ্রমণার্থে গয়া গমন করেন। সেখানে এক রাত্রে ঘুমের মধ্যে তাঁর স্বপ্নে আবির্ভূত হন বিষ্ণু-অবতার গদাধর। স্বপ্নেই গদাধর বলেন যে, তিনি ক্ষু‌দিরামের সন্তান রূপে অবতীর্ণ হবেন ধরাধামে। এই ঘটনার এক বছর পরে জন্ম হয় গদাধর, ওরফে রামকৃষ্ণের।

২. ক্ষুদিরাম যখন গয়ায় তখন রামকৃষ্ণের জননী চন্দ্রাদেবী একদিন শিব মন্দিরে গিয়েছিলেন পূজা দিতে। সেখানে এক অলৌকিক অভিজ্ঞতা হয় তাঁর। তিনি প্রত্যক্ষ করেন, এক দিব্যজ্যোতি মহাদেবের শ্রীঅঙ্গ থেকে নির্গত হয়ে প্রবেশ করছে তাঁর শরী‌রে। এই ঘটনার কিছুদিন পরেই গর্ভবতী হন চন্দ্রা দেবী।

৩. গদাধরের বয়স যখন ছয় কি সাত তখন বন্ধুদের সঙ্গে মাঠে ক্রীড়ারত গদাধরের চোখ হঠাতই চলে যায় আকাশের দিকে। কালো মেঘের প্রেক্ষাপটে এক ঝাঁক বককে উড়ে যেতে দেখে ভাবতন্ময় হয়ে পড়ে গদাধর। কিছু পরে মূ্র্চ্ছা যায় সে। জ্ঞান ফেরার পরে দেখা যায়, সে একেবারে স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। এই ঘটনাকেই ভক্তেরা শ্রী রামকৃষ্ণের জীবনের প্রথম ‘ভাবসমাধি’ বলে মনে করেন।

৪. গদাধর যখন ৮ বছরের তখন প্রতিবেশিনীদের সঙ্গে কামারপুকুরের অদূরে আনুড় গ্রামে বিশালাক্ষী দেবীর পুজো দিতে যাওয়ার সময়ে দেবীর নামগানরত গদাধর পুনর্বার ভাবতন্ময় হয়ে‌ পড়ে। অবিরল ধারায় জল গড়াতে থাকে গদাধরের চোখ থেকে। সন্ত্রস্ত মহিলারা একমনে বিশালাক্ষী দেবীকে স্মরণ করে তাঁর কৃপা প্রার্থনা করতে থাকেন। কিছুক্ষণ দেবীর স্তব করার পরে স্বাভাবিক হয়ে ওঠে গদাধর।

৫. গদাধরের বাল্যকালে একবার শিবরাত্রির সময়ে গ্রামস্থ সীতানাথ পাইনের বাড়িতে শিবের মহিমাসূচক যাত্রার আয়োজন হয়েছে। কিন্তু যাত্রা মঞ্চায়নের দিনে দেখা গেল শিবের ভূমিকায় যে ছেলেটির অভিনয় করার কথা সে আসেনি। উপস্থিত সকলের অনুরোধে শিবের ভূমিকায় অভিনয় করতে সম্মত হল গদাধর। কিন্তু শিবের সাজসজ্জা পরিহিত অবস্থায় মঞ্চে অবতীর্ণ হওয়ার পরে পুনরায় বিহ্বল হয়ে পড়ে সে। বিরামহীন নয়নাশ্রু গড়াতে থাকে তার চোখ থেকে। পরের দিন সকাল পর্যন্ত এরকমই তন্ময় অবস্থায় কাটে তার।

৬. দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দিরের প্রধান পুরোহিত নিযু‌ক্ত হওয়ার পরে দেবীর দেখা না পেয়ে শ্রী রামকৃষ্ণ একদিন আত্মাহূতি দেবেন বলে স্থির করে মন্দিরের গায়ে ঠেস দিয়ে রাখা খাঁড়াটির দিকে ধাবিত হন। তখনই জগন্মাতার এক অদ্ভুত রূপ দর্শন হয় তাঁর। তিনি প্রত্যক্ষ করেন, এক আশ্চর্য জ্যোতিঃপুঞ্জ দশদিগন্ত আচ্ছাদিত করে ফেলেছে আর সেই পুঞ্জীভূত জ্যোতির ভিতরে উঠছে অন্তহীন ঢেউ। অভিভূত রামকৃষ্ণ সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন এই দৃশ্য দেখে।

৭. একদিন দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে দেবীর পূজা করছেন ঠাকুর। রানি রাসমণি উপস্থিত রয়েছেন সেখানে। হঠাৎ রানির গায়ে আলতো চাপড় মেরে ঠাকুর বললেন, ‘‘কেবল ওই চিন্তা! এখানেও ওই চিন্তা!’’ ঠাকুরের এই আচরণে সকলেই যখন অভিভূত তখন রানি নিজেই লজ্জিত মুখে স্বীকার করলেন, দেবীর সামনে বসেও দেবীর ধ্যানে তিনি মনোযোগ দিতে পারেননি। বরং চিন্তা করছিলেন একটি বিশেষ মোকদ্দমা বিষয়ে। ঠাকুরের আচরণের ইঙ্গিতটা ছিল সেদিকেই।

৮. দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক মথুর বিশ্বাস একবার রামকৃষ্ণের কাছে আব্দার করেন যে, ঠাকুরের যেমন ভাবসমাধি হয়, তেমনই ভাবসমাধির অভিজ্ঞতা লাভ করতে চান তিনিও। ঠাকুর মথুরবাবুকে বিরত করার অনেক চেষ্টা করেন। কিন্তু মথুরবাবু নাছোড়। শেষে ঠাকুর বাধ্য হয়ে বলেন, ‘‘ঠিক আছে, মা-কে বলব, তিনি যা করার করবেন।’’ এর কয়েকদিন পরেই সমাধিস্থ হন মথু‌রবাবু। তাঁর চোখ থেকে অবিরল ধারায় ঝরতে থাকে জল। সেই অবস্থায় ঠাকুরকে দেখে তাঁর পা জড়িয়ে ধরেন মথুর। গদগদ কন্ঠে বলেন, ‘‘এ কী করলে ঠাকুর! আমার যে বিষয়কর্ম কিছুতেই মন বসে না আর। আমাকে মুক্তি দাও এ থেকে।’’ ঠাকুর হেসে বললেন, ‘‘আগেই বলেছিলেম, ভাবসমাধি সকলের সয় না।’’

৯. একবার ঠাকুরের খুড়তুতো দাদা হলধারী কোনও কারণে ঠাকুরের প্রতি রুষ্ট হয়ে তাঁকে অভিশাপ দেন, ‘‘তোর মুখ দিয়ে রক্ত উঠবে।’’ তার কয়েকদিন পরে সত্যিই ঠাকুরের মুখ থেকে রক্তপাত শুরু হয়। হলধারী সহ সকলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। শেষে এক বয়স্ক সাধু ঠাকুরকে পরীক্ষা করে বলেন, আসলে হঠযোগ সাধনার চরম অবস্থা জড়সমাধিতে পৌঁছে গিয়েছিলেন শ্রী রামকৃষ্ণ। ফলে সুষুম্নাদ্বার খুলে গিয়ে রক্ত মাথায় উঠে যাচ্ছিল। এই অবস্থায় রক্ত মুখ দিয়ে বেরিয়ে গিয়ে উপকারই হয়েছে তাঁর। নতুবা ঠাকুরের জড়সমাধি আর ভাঙত না। নিজের অভিশাপ বরে পরিণত হয়েছে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন হলধারী।

১০. ঠাকুরের বিয়ে দেবেন বলে মনস্থ করেছেন মা চন্দ্রাদেবী আর দাদা রামেশ্বর। কিন্তু পছন্দমতো পাত্রী আর পাওয়া যাচ্ছে না। শেষে ভাবাবিষ্ট ঠাকুরই একদিন বলে দিলেন, ‘‘জয়রামবাটী গ্রামের শ্রীরামচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে যে পঞ্চম বর্ষীয়া কন্যা, সেই আমার উপযুক্ত।’’ ঠাকুরের নির্দেশিত বাড়িতে খোঁজ করতেই সন্ধান মিলল সারদামণির।